Poem

সময়ের চিহ্নগুলি সময় মানে না

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

চাঁপা গাছটি যুবতী না বুড়ি
চাঁপা তার বয়েস জানে না
পাহাড় ডিঙিয়ে আসা ঝরনার দুধারে কত নুড়ি
সময়ের চিহ্নগুলি সময় মানে না
বাতাস কী কথা বলে শীর্ণতোয়া নদীটির কাছে?
আছে, আছে, আছে।

সেই বার্তা নিয়ে উড়ে যায় একটি আচাভুয়া পাখি
কোনো কোনো মানবীরই মতো তার ডানা
আকাশে তখন কালো দুরন্ত বৈশাখী
শুধু মনোলোকে দেয় হানা
চরাচর মুখ গোঁজে, পাশ ফেরে অরণ্যের ঘুম
নগরে তখন বৃষ্টি, নাগরীর নূপুর মত্ততা
ভেঙে দেয় রাত্রির নিঝুম
কথা ভাঙে, কথা ভেঙে ভেঙে হয় পাহাড়ের মতো নীরবতা……
বাতাস তবুও কিছু বলে কানে কানে
সম্রাট অশোক তার মর্ম লিখে গেছেন পাষাণে।

ছাতিম গাছের নীচে বসে আছে যে-অন্ধ ভিখারি
অন্ধকারে মুছে যায়, ভোরের আলোর সঙ্গে জাগে
হাতের আঙুল কাঁপে, মুখে বল্মীকের ঘর বাড়ি
সে ওখানে গেড়ে আছে গৌতম বুদ্ধেরও কিছু আগে
গ্রামে গঞ্জে শুকনোস্তনী ঘোরে আম্রপালী
দিবাস্বপ্নে হানা দেয় মার।
আয়ুর কৃপণ যত মুষ্টি আঁটে, খসে যায় বালি
ঘানির চাকায় ঘঘারে মায়ার সংসার
বাতাস গোপনে তবু কী যে বলে খর্জুর বৃক্ষকে
মরুদেশ কাঁদে সেই শোকে।

পিতার অতৃপ্তি পুড়ে ছাই হলো গ্রামীণ আগুনে
পিতামহ রেখেছেন কাঠের সিন্দুকে দীর্ঘশ্বাস
কেউ যায় নিরুদ্দেশে, কেউ বাঁচে গোলাপের পাপড়ি গুনে গুনে
পাপপাশের ধুলো চেটে যেন কার হলো স্বপ্ন নাশ।
দর্পণের উল্টো পিঠ কেউ মনে রাখে?
ঘড়ির শিকারি চেনে কালপুরুষের মৃদু হাসি?
মুষ্টিবদ্ধ বাঘনখে যারা বন্ধুদের গাঢ় আলিঙ্গনে ডাকে
তাদেরও উত্তরমেঘ নয় অবিনাশী
বাতাস তবুও বলে, আয়, কাছে আয়
দিন যায়, কেন বৃথা যায়!

হে সময়, একমুখী ধাবমান তীর, হে সময়
হে শতাব্দী, অলীক সীমানা
গানের মুদারা-তারা, প্রতীক্ষিত সম, শেষ নয়
আমি আছি, আঁমি নেই, তবু সব জানা
বাতাস কখনো ঘূর্ণি, আবার স্রোতের মতো বলে যায় হৃদয়ের কাছে
আছে, সব আছে!

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 158

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts