Poem

ঘুম,
যেন মা দিলেন ডাক আদুরে মাদুরে,
ঘুম, পিতা দিলেন বুলিয়ে মাথা অলীক আঙুলে।
ঘুম, কারো সুরভিত কালো চুলে চোখ মুখ একান্ত ডোবানো,
ঘুম, গাঢ় গোধূলির থিরথিরে হ্রদ,

ঘুম,
জলজ উদ্ভিদ যেন, ভুল অনন্তের ধু-ধু দিকে ভাসমান।
ঘুরে দেয়ালে মানিপ্ল্যান্ট, উচ্ছ্বসিত রঙিন পাখির
মাতাল ভ্রমণ;
ঘুমের দেয়ালে ডাক-পিয়নের নীল হলদে খাম বিলি,
নিরিবিলি ঘরে ফেরা, কৃপণ উঠোনে
পা রেখে স্পাইয়ের মতো মাটির গভীর থেকে স্মৃতি খুঁড়ে তোলা,
কাউকে কোথাও খুঁজে না পাওয়া কখনো,
অচেনা অথচ অতি মনোরম রাস্তা, টুপি-পরা
একজন স্মার্ট পেঙ্গুইন
দ্রুত যান হাইকোর্টে। ক্যালেন্ডার প্রবল হাওয়ায়
দোলে শুধু দোলে
তারিখবিহীন।
ক্যালেন্ডার থেকে এক ঝাঁক হরিয়াল
চকিতে বেরিয়ে আসে, কারো হাত রাজহংসীর গ্রীবার মতো
হয়ে ফের মিশে যায় গাছের শাখায়।
ঘুমের দেয়ালে তুমি নিবিড় লতানো আসো ভিন্ন অবয়বে,
শিয়ামিজ বেড়ালকে বিলাও আদর, যাও ম্যাজিক লণ্ঠনে,
সেতারের মতো বাজো। হাই সোসাইটি তোলে হাই মধ্যরাতে।
আজকাল কী যে হচ্ছে, ঘুম গৃহস্থের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র, বাস্তুত্যাগী।
চলেছি অজস্র ভেড়া গুনে গুনে, বেড়া ডিঙানোর খেলা, তবু
আবেশে আসে না বুজে চোখ।

অনিদ্রা মরুর খাঁ-খাঁ কিংবা পোড়া ভাদ্রের দুপুর,
অনিদ্রা প্রস্রাবখানা, দারুর দুর্গন্ধে ভেজা, বিচ্ছিরি হলুদ
দেয়ালে অশ্লীল লিপি, চিত্র কদাকার।
অনিদ্রা ভ্যানগগের আত্ম-প্রতিকৃতি
কিংবা কাক-ওড়া ফসলের ক্ষেত,
অনিদ্রা তুমুল নজরুল ইসলামী
পদ্য জ্বালাময়ী
অনিদ্রা কণ্বের তপোবনে
রুদ্র, রুক্ষ, কট্রর দুর্বাসা।

আজকাল কী-যে হচ্ছে, সারারাত ধরে,
শুনছি প্রতিটি শব্দ দেয়ালঘড়ির, শয্যা ছেড়ে
দেখি না আয়নায় মুখ, পাছে বোদলেয়ারের মতো
নিজেকেই অন্য কেউ ভেবে
জানাই অভিবাদন, বলি, ‘হ্যালো, কেমন আছেন?
অনিদ্রা আমার শক্র, তবু তার শক্রতাই ঠেকে সহনীয়
কেননা নিশ্চিত জানি তুমিই জননী অনিদ্রার।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 146

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts