Poem

সমুদ্রযাত্রা

শামসুর রাহমান

সেই কোন্‌ যুগে আমি করেছি সমুদ্রযাত্রা। অথচ নিয়ত
সাগর সঙ্গমে কিংবা দ্বীপ-দ্বীপান্তরে
ঘুরেও এখনো আমি সামুদ্রিক জ্ঞান
আহরণে ব্যর্থ নিত্যদিন। কখনো ওড়াই পাল সারাবেলা,
রঙিন, অথচ শতচ্ছিন্ন, কখনো বা দাঁড় বাই,
জল সেঁচি কখনো-কখনো। মাঝে মাঝে
ঝড়ের থাপ্পড়ে কাঁপে ডিঙি, যেন ভয়ার্ত পায়রা
গোখরোর ফণার ছায়ায়। ছেঁড়ে দড়িদড়া আর
কোথায় যে যাই
ভেসে ডিঙিসুদ্ধ প্রতারক কুয়াশায়, মেলে না হদিস। শুধু
চেয়ে থাকি অসহায় বিপুল জলের দিকে, ব্যাপ্ত নীলিমায়।

অবেলায় ভীষণ ক্ষুধার্ত চোখে দেখি
কেমন বেগানা পাখি চক্রাকারে ঘোরে বারে বারে
মাথার উপর। হস্তধৃত দাঁড় দিয়ে
নিষ্ফল আঘাত ছুঁড়ি পাখির উদ্দেশে
বারংবার, নির্মোঘ চিৎকারে
নিঃসীম শূন্যতা ছিঁড়ে পাখি উড়ে যায়
নাগালের পরপারে।কখনো আবার
একটি দু’টি মাছ
লোভনীয় হয়ে ভেসে ওঠে
ডিঙির অনেক কাছে। আমি
আমার নিজের মধ্যে মৎস্যশিকারির
লীলা দেখে চমকিত। আমার জঠরে নরকাগ্নি আর
নিস্তব্ধ আকাশে
অন্ধ সুন্দরীর মতো চাঁদ
আসে, জ্যোৎস্না কুহক ছড়ায় চারপাশে। ভেসে চলি
ক্রমাগত দিকচিহ্নহীন;
অসফল জেলের মতোন পড়ে থাকি বড় একা
ডিঙির জঠরে, মতিচ্ছন্ন ধূ-ধূ ঘুমে
চোখ বুজে আসে।
বস্তুত উপরিতলে থেকে যাই সকল সময়, সমুদ্রের
গভীরে হয় না যাওয়া, মানে
রত্নান্বেষী ডুবুরীর মতো
এখনো নামিনী নিচে; আজ অব্দি পাইনি সন্ধান
অনিন্দ্য জলজ উদ্যানের। ডিঙি ডোবে তো ডুবুক,
ওপরের দৃশ্যাবলী থেকে
নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে বরং গভীরে যাও বলে
কে যেন অতলে দেয় ডুব। আমি মজ্জাগত ছায়াবিলাসের
গোপনীয়তায় চেয়ে থাকি। জল-স্থল,
এমনকি অন্তস্তল ঢেকে গেছে অপরূপ মৃগতৃষ্ণিকায়।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 134

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts