Poem

চড়ুইভাতির পাখি

শামসুর রাহমান

দপ্তরে বসে গুমোট দুপুরে হঠাৎ পড়ল মনে
একদা আমরা ক’জন নিভৃতে কাটিয়েছিলাম চড়ুইভাতির দিন
শালনার শালবনে।

শীত দুপুরের স্বচ্ছ রোদের আদর শরীরে মেখে
কাটিয়েছি বটে আহারে বিহারে; একটি কি দু’টি পাখি
চকিতে গিয়েছে ডেকে।
কেউ বলেছিল কবরী কেমন খোঁপা বাঁধে সিনেমায়,
কেউবা ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজাল ঊষা উত্থুপ, রুনা লায়লার গান,
কেউ পপ সুরে লেকের কিনারে চমকিলা নেচে যায়।
কেউ সচিত্র পত্রিকা খুলে অলস দৃষ্টি মেলে
দেখে নটীময় ফুরফুরে পাতা, পড়ে উড়ো কথা কিছু;
কেউ বুক থেকে তার জামদানী শাড়ির আঁচল হেসে
ফেলে দেয় অবহেলে।

নক্‌শি ছায়ায় কাঠবিড়ালিটা বিকেলের মায়া নিয়ে
তরতর করে গাছ বেয়ে ওঠে দেখি।
মাথার ওপর খেলিয়ে সবুজ ঢেউ যায় কত যে সতেজ টিয়ে।
আমি তার মুখ ভেবে আর কবিতার
বিন্যাস খুঁজে ছিলাম একাকী ঘাসে কান পেতে ফলের মতোন শুয়ে।
অলকানন্দা বয়ে যায় পাশে, হৃদয়ে আমার লায়ারের ঝংকার।

এখানে কোথায় হরিণের লাফ, বাঘের জোরালো ডাক?
নিসর্গ খুব শান্ত এখানে, কিন্তু হঠাৎ ভীষণ চমকে শুনি
গুলির শব্দ, দিশাহারা দেখি বনের পাখির ঝাঁক।
আমাদের কেউ টিপেছে ট্রিগার, একটি আহত পাখি
নিরীহ সবুজ ঘাস লাল করে অদূরে লুটিয়ে পড়ে।
ছটফট-করা পাখিটার দিকে সভয়ে তাকিয়ে থাকি।
পাখিটার কাছে ছুটে যায় শিশু, শিকারি দিলেন শিস।
শালবনে গাঢ় ছায়া নেমে আসে, এখন ফেরার পালা।
ছায়ার ভেতর বেজে ওঠে ধ্বনি-‘অ্যাডোনিস, অ্যাডোনিস’।

যাকে আমি খুঁজি সকল সময়, যে আমার ব্যাকুলতা,
তার উপেক্ষা যখন স্মরণে আসে,
তখন আমার মনে পড়ে যায় চড়ুইভাতির আহত পাখির কথা।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 118

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts