Poem

চক্ষুবিশেষজ্ঞ ব’লে দেননি

শামসুর রাহমান

এসব কিছু যে হবে, ঘন ঘন ঘটতে থাকবে চক্ষুবিশেষজ্ঞ ব’লে
দেননি আমার চক্ষু পরীক্ষা করার পর। এখন কী-যে
হয়েছে, গরগর-করা গ্রীষ্ম দুপুরে দেখি ঘরের ভেতর
শ্রাবণের মেঘ নেমেছে। বুকশেলফের বইগুলো গুচ্ছ গুচ্ছ
ভূর্জপত্র, দুলছে পাঠশালার শিক্ষার্থী যেন; বাল্ব কদম ফুল।
এক চিলতে বারান্দায় বাগদাদের নিগৃহীত দার্শনিক
ইবনে রুশদ মোড়ায় ব’সে তন্ময় শুনছেন লালন সাঁই-এর
‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি। দরজায় দিকে আবছা
তাকাতেই চোখে পড়ে আফ্রেদিতি, যার প্রস্ফুটিত
নগ্নতায় সামুদ্রিক ফেনার ফুরফুরে চাদর,
চকিতে দুর্গার
সংহারমূর্তি ধারণ ক’রে তেড়ে আসে আমার দিকে।
জ্বালাধরা চোখ বন্ধ করতে পারি না। একজন ডাকপিয়ন
ঘরের ভেতর ঢুকে প’ড়ে হাতে গুঁজে দেয় হরফবিহীন চিঠি এবং
সেই চিঠি তক্ষুণি পড়ার জন্যে শাসাচ্ছে নাছোড়,
জাঁহাবাজ এক সান্ত্রী; পড়ার ভান ক’রে আওড়াই
এমন একটি কবিতা যা’ কস্মিনকালেও দেখিনি কোথাও কিংবা
পড়িনি। এই দৃশ্য মুছে যেতেই আমাকে লক্ষ্য ক’রে পাথর
ছুঁড়ছে কাবিল, আমার বুক চিরে বেরোয়া আর্তনাদ।
কখন যে রাত হয়, টের পাই না। আসমানের চাঁদটাকে
খুবলে খুবলে খায় নেকড়ের পাল আর বেদনার্ত দৃষ্টি
মেলে সক্রেটিস কম্পিত হাতে আমার দিকে এগিয়ে দেন
হেমলকের ভয়ঙ্কর-নীল পেয়ালা। চতুর্দিক থেকে অনেকগুলো
কাঁসার বাটির ধুন্ধুমার আওয়াজের মতো বহু লোকের
হাসি আমাকে বিঁধতে থাকে। সুফি মনসুর হাল্লাজের
রক্তের জাগ্রত বুদ্বদে দেয়ালে মুদ্রিত হয় সত্য শব্দটি
সত্যের মতোই ভাস্বর। রক্তাঙ্কিত সত্যকে অগণিত নোংরা নোখ
আঁচড়ে আঁচড়ে তুলে ফেলতে চায় তুমুল হিংস্রতায়।
ছন্নছাড়া দাবদাহ আমাকে পোড়াচ্ছে অষ্টপ্রহর, আমি
ঝর্ণাধারার কোমল ধ্বনি শোনার জন্যে অঝোর বর্ষণে স্নাত
হওয়ার জন্যে উন্মুখ, প্রতীক্ষা-কাতর আমার এই ছোট ঘরে।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 81

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts