Poem

একটা কেমন তক্ষশিলা

শামসুর রাহমান

যখন থাকি সত্তা ঢেকে বেহুদা সন্তাপে,
হঠাৎ করে বুকের ভেতর তক্ষশিলা কাঁপে।
প্রাচীনতার গুমরোনো সেই আলো-আঁধার ছিঁড়ে
তোমার মুখের সিলুএট্‌টি জাগে বাসের ভিড়ে।
কখন যে ফের শেয়াল-রঙের আঁধারমাখা গলি
আমার কাছে অন্তরালে মেলে দেয় অঞ্জলি।
বিস্মরণও তরঙ্গিত একলা পাখির ডাকে,
সবার বুকে একটা কেমন তক্ষশিলা থাকে।

জীবন কাটে দুঃখ সুখের প্রান্তরেখা মেপে;
বিষণ্নতা, দোষ কি আমার? তুমি এলে ব্যেপে।
রাতবিরেতে এই নিবাসে চলছে খোঁজাখুঁজি;
অস্মিতারই যমজ ভ্রাতা বিষণ্নতা বুঝি।

বাড়ি ফেরা ভুল হয়ে যায়, ঊর্ণাজালে ফিরি,
দেয়াল-জোড়া নিজের ছায়ার আহাম্মুকে ছিরি;
চকিতে এক বেয়াড়া ফাঁস জাপ্‌টে ধরে গলা,
চেনাজানার বাইরে যাচ্ছি কার সেয়ানা ছলায়?

হঠাৎ কোনো মধ্যরাতে ঘুমের ঘরে একা
উঠলে জেগে আদিমতায় পাব তোমার দেখা?
হাট-করা এই কপাট ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছ ভেবে
দৌড়ে আমি স্বপ্নপ্রবণ, হৃদয় জ্বলে নেভে।

তোমার কথা ভেবে ভেবে রাত্রি আমার খাঁ-খাঁ
দুপুর হয়ে চক্ষু ভাজে, পোড়ায় প্রাণের শাখা।
দুই গণ্ডুষ জলের খোঁজে খুঁড়ছি বেবাক ভূমি,
এমন মরুর রুক্ষ ঝড়ে মুখ লুকালে তুমি।

ফুরফুরে এক প্রজাপতি এসে নিথর দ্বারে
ছড়িয়ে দিয়ে সপ্ত রেণু দৃষ্টি কেমন কাড়ে।
‘এই তো আমি খুঁজছ যাকে’, বলল প্রজাপতি,
‘তোমার হাতের শূন্য মাঠে হবে আমার গতি।
ছন্নছাড়া প্রজাপতি কিংবা শালিক পাখি
ঝলমলিয়ে বাঁধতে আসে আমার হাতে রাখি।
তোমায় আমি পাখির বুকে, মাছের চোখে পাব?
নইলে আমি মনস্তাপে নির্বাসনে যাব।

আমার ভারি আস্থা ছিল গোলাপের সদ্ভাবে,
কিন্তু গোলাপ উঠল ফুঁসে, যেন আমায় খাবে।
তক্ষশিলা জীবন্ত ফের ব্যাপক হাহাকারে,
রিক্ততারই ফস্কা ঝুঁটি ধরি অহংকারে।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 121

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts