Poem

যিনি শয্যাগত

শামসুর রাহমান

জানালায় প্রত্যুষের হাত; একটি অচিন পাখি লেজ নেড়ে
আসে আর যায়। সারা ঘরে দীর্ঘস্থায়ী
ব্যাধির প্রবীণ গন্ধ; যিনি শয্যাগত,
তার শালে কয়েকটি মাছি আফিমখোরের মতো
ধূসর ঝিমোয়। বিছানার
পাশে কছু কবিতা, দর্শন আর সমাজতত্ত্বের বইপত্র।

নড়ে চড়ে উঠে চোখ খুলে তাকাতেই
যেন ক্রমে রুয়োর বিষণ্ন রাজা স্পষ্ট হয় সংকীর্ণ শয্যায়;
বলেন না কিছুই, কেবল
আলগোছে তাকিয়ে দেখেন চারদিকে, একপাশে
প’ড়ে থাকা বিশীর্ণ অলস তার হাত বুঝি কোনও
বিরল সম্মানে ঝলসিত হ’তে প্রতীক্ষা-কাতর!

প্রতিভার মতো রোদ ঘরে আসে, শয্যাগত যিনি
তার কণ্ঠনালী পান করে রোদ, যেন কিছু সতেজ বীয়ার।
প্রতিভা এবং ব্যাধি কণ্ঠলগ্ন হয়ে পরস্পর
করে বসবাস,
এ-কথা কতটা সত্য জানা নেই, তবু তিনি ব্যাধির শেকলে
বন্দী বহুকাল, ব্যাধিক্ষেত্রে ধুঁকে ধুঁকে
নিজেকে দর্পণ ক’রে আলোয়, তিমিরে
কত যে কুসুম তিনি ফোটালেন মোহন মেধায়।

মাঝে মাঝে তিনি ঘুমঘোরে
দেখেন বিজন মাঠে এক পাল পাগলা কুকুর
তাকে লকলকে জিভ বের ক’রে তাড়িয়ে বেড়ায়,
কখনও আবার কতিপয়
ক্ষুধার্ত মানুষ,
শতচ্ছিন্ন কোর্তা-পরা, ছিঁড়ে খাচ্ছে তাকে জয়োল্লাসে।

নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে ভাবেন-
এই তো এখনই কাদা খ’সে খ’সে পড়বে, হাতের
বদলে কাদার টুকরোগুলো ইতস্তত
খাকবে ছিটানো, আঙুলের স্থানে কিছু
পাটখড়ি দেখা যাবে হয়তো বা, তবে কি কেবল
কবিতাই পরিত্রাণ, এই প্রশ্নে নিবিড় জড়িয়ে গিয়ে তিনি
জানালার বাইরে রোদ্দুরে পাখিদের ওড়াউড়ি দেখে নেন।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 125

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts