Poem

কী করে যে বেঁচে ছিল

শামসুর রাহমান

এখানে নানানভাবে নানাজন কাটায় জীবন।
কেউ রাস্তা খোঁড়ে, কেউ টানে গুণ ধান ক্ষেত ঘেঁষে,
কেউবা আপিশে লেখে নথিপত্র, কেউ কেউ ঘোরে
উদাস প্রান্তরে বনবনান্তরে, কেউ গেরস্থালি
ভালোবেসে নীড়মুখী পাখির মতোন মনোযোগে
সাজায় সংসার, কারো দিন যায় গাছের ছায়ায়
পথপ্রান্তে কী একাকী। কেউ কেউ নিজস্ব বিবরে
স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকে, কেউবা বাঁচার মানে খোঁজে
মিছিলে সভায় আর নেতার ভাষণে। কারো সরু
দড়ির ওপর হেঁটে-যাওয়া, কারো শুধু বসে-থাকা।

হরিদ্রাভ গ্রন্থাগারে কারো বই পড়ে কাটে বেলা,
আর নিরক্ষর কেউ জীবন বিশদ করে পাঠ
মেধাবী ছাত্রের মতো। কারো কারো চোখ এত শাদা,
তাদের দৃষ্টিতে গাছ শুধু গাছ, আকাশ আকাশ,
কেউ কেউ শূন্যতায় অকস্মাৎ দেখে ফেলে কত
সুনীল, সবুজ ঘোড়া, দ্যাখে ওরা নৌকো ফুল হ’য়ে
গহন নদীতে ভাসে। কেউ টিন আর সীসা নিয়ে
সর্বদা ঘামায় মাথা; কেউ গাছ থেকে, গর্ত থেকে
অথবা পাতাল থেকে শব্দ তুলে আনে নিরিবিলি।
এরকম নানা খাতে বয় নানাজনের জীবন।

জীবনে ঔদাস্য কিছু, কিছু গূঢ় অস্পষ্টতা থাকে।
অস্পষ্টতা হেতু বাড়ে আকর্ষণ, আংটির মতোন
পরি কত রহস্যের সোনালির হলুদ সুতো, পড়ি
বেড়ালের চোখে স্মৃতি, মৃত প্রেমিকের সঙ্গে হাঁটি

অস্পষ্ট প্রহরে পারস্পর্যহীন কালের বাগানে।
স্বাপ্নিকের আস্তানায় নৃত্যপর প্রাচীন করোটি,
ওষ্ঠে কর্কশতা আর ধূলোবালি নিয়ে বেঁচে থাকি,
অথচ পাইনি খুঁজে অদ্যাবধি বাঁচার নিয়ম।
পরবর্তীগণ সবিস্ময়ে বলবেন কোনোদিন-
সর্বনাশ গোলযোগে কী করে যে বেঁচেছিল ওরা।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 138

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts