Poem

আমিও রেখেছি নগ্ন পদযুগ, এ জগতে। জলে
আয়না আছে বলে নিয়ত এড়িয়ে গেছি জলাশয়,
জলজ দর্পণে মজে সমাজ-সংসার কী অতলে
ডুবিয়ে পুরাণ হতে চাইনি কখনো। বড় ভয়
ছিল সেই লতাগুল্মময় জলাশয়কে আমার, কিন্তু তবু
মায়াবী বাণিজ্যে নিঃসঙ্গতা আমাকে নিয়েছে কিনে
কেশাগ্র অবধি, তাই বৈশাখের তীব্র দাহে প্রভু
তন্ন তন্ন করে জল খুঁজি। টলটলে অমন দর্পণ বিনে

বাঁচা দায়; প্রভু, তুমি সেই জল? আমি ছলচ্ছল আকাঙ্ক্ষায়
কখনো নিজেকে কখনোবা দূরে পদযাত্রা করে বারংবার
পাখির পালকে পাথরের দিকে চোখ রেখে দেখি শূন্যতায়
বিপন্ন উধাও তুমি, দর্পণে আমার মুখ কতিপয় হাড়।

এ কোন বৈশাখে আমি অকস্মাৎ পৌঁছে গেছি দীপ্র
জলাশয় খুঁজে খুঁজে? চতুর্দিকে বালি ভয়ানক
জান্তব, ক্ষুধার্ত; আমি, রুক্ষ, তৃষ্ণাতুর, খুঁড়ি ক্ষিপ্র
ক্রূর বালি ফোয়ারার লোভে। আমার দশটি নখ
ব্যর্থ, কালো; ওষ্ঠে গণ্ডে বালুকণা আর সীবন-রহিত জামা
খণ্ড খণ্ড হ’য়ে খসে বিচূর্ণিত স্মৃতির মতন।

এক পাল উন্মাত্ত উটের শব্দ মাথার ভেতর, তপ্ত তামা
চতুষ্পার্শ্বে তরঙ্গিত সর্বক্ষণ। গুপ্ত মায়াবী বাণিজ্যে ধন-
রত্ন পাব বলে এই কংকাল কণ্টকময় পথে
চলেছি সন্তের মতো উপবাসে। জলাশয় না পেলেও হেঁটে
হেঁটে যেতে হবে চিরদিন; কেননা কাঙাল আমি এ জগতে
স্বেচ্ছায় চেয়েছি হতে পান্থজন, যতই ঝরুক রক্ত পদযুগ ফেটে।

Author Bio

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। জীবদ্দশাতেই তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি হিসেবে মর্যাদালাভ করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ, তথা

More

This post views is 754

Post Topics

Total Posts

2547 Published Posts