Poem

তোমার এতই ভালো লাগছে গড়বন্দীপুর, এই থিকথিকে কাদা,
পচা কাঁঠালের গন্ধ?
নীল রঙের শাড়িতে কত চোরকাঁটা, যেন অসংখ্য তীরবিদ্ধ তুমি
পা ধোবে এই শুকনো নদীর ঘাটে?
এখানে অনেক দীর্ঘশ্বাস ছিল, সব উড়ে গেল তোমার হাসির শব্দে
এখানে অনেক লুকোনো কান্না ছিল, এখান সেই সব চোখ
তোমাকেই দেখছে
আমাদের এই গড়বন্দীপুরে তুমি, তুমি যেন বিলেত-অ্যামেরিকার চেয়েও
দূরের কোনো স্বর্গের দেবীর মতন
গতবার সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে আগুন লেগেছিল, তুমি সেই প্রতিমার
চেয়েও
সুন্দর গো
এখানে শ্বেত কমল ফোটে না, তোমার পা ফেলার মতন সবুজ ঘাসও নেই
ঐ সাপটা দেখে তুমি ভয় পেও না, ও এমন কিছুনা, জলঢোঁড়া
এসো এই বাজ-পড়া গাছটির পাশ দিয়ে
কালভার্টের মাঝখানটা ডেবে গেছে, তাতে কোনো দোষ নেই,
এক হাজার বছর ধরে ওটা এমনই আছে
সামনের এই গোয়ালঘরটি পেরুলেই আধখানা প্রান্তরের ওপাশে দেখবে
সেই গড়
যেখানে স্থাপত্য নেই, ইতিহাস নেই, আছে শুধু ভগ্ন স্মৃতিকথা
একটু সাবধানে এসো
বাবলা কাঁটায় তোমার শরীর যেন ছড়ে না যায়
পাঁজরা বার করা গোরুদুটিকে তুমি ধন্য করলে তোমার স্নেহদৃষ্টিতে
ধুলোয় গড়াগড়ি দেওয়া কার্তিক সাপুইয়ের ছেলেকে বুকে তুলে
আদর করলে তুমি…

হে দেবী, তুমি কি খরায় জ্বলা মাঠে বৃষ্টি এনে দিতে পারো
নেতিয়ে পড়া ধানের বীজে এনে দিতে পারো দুধ
তোমার স্পর্শে আমগাছগুলো থেকে পালিয়ে যাবে সব পোকা
বিদ্যুৎ চমকের মতন তোমার মুখখানি, তুমি আঁচল উড়িয়ে
গেয়ে উঠলে গান
তোমার খুশির লাবণ্যে থরথর করে কাঁপছে কচি কচি সবুজ পাতা
পানা পুকুরটায় আজই প্রথম ফুটলো একটা লাল শাপলা ফুল
গড়বন্দীপুরে আজ আনন্দের প্লাবন বইছে, তুমি এসেছো, তুমি সৌভাগ্যের
দুহিতা…

হে দেবী, এখান থেকে আবার পথ চিনে ফিরে যেতে পারবে তো?
মনে আছে সেই মন্ত্র?
যদি ভুলে যাও, গড়বন্দীপুরের গোলকধাঁধায় আটকে যাবে তোমার পা
তা হলে তুমিও একদিন হয়ে যাবে সাতটি সন্তানের জননী, দিনের শাকচুন্নী,
হাবার মায়ের মন।

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 139

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts