Poem

পুরনো জন্মের দিকে দৃষ্টিপাতে হয়তো ভয় পাবো…
একদিন ছিলাম আমি হিংস্র ঊর্ণনাভ অন্ধকারে
হাজার বাসনাসূত্রে, আর বারে বারে লোভী চোখে
মরেছি অনেক মৃত্যু—স্মৃতির নরকে বহুকাল।
মনে পড়ে অরণ্যের আশ্চর্য বিশাল বনস্পতি
আমার আশ্রয় ছিল, স্ত্রী পুত্র সন্ততি দুঃখ সুখ
শাখার নির্ভরে ঢেকে দুঃসাহসে বুক ভরে নিয়ে
বহু রাত্রি পাহারায় দু চক্ষু শানিয়ে জেগে জেগে
নিশ্বাস নিয়েছি বুকে।

নিশ্বাসে আগুন ছিল, চোখের সম্মুখে কতবার
হা-হা-শব্দে জ্বলে উঠল বাল্য সারাৎসার প্রিয় স্মৃতি
ফেরারী মায়াবী সুখ, প্রেম, পুণ্য, প্রীতি, অহঙ্কার
এইসবই শৃঙ্খল যেন, ভেঙে যায় বার বার গড়ে,
আমার পৃথিবী ঘিরে
ঈশ্বরের পুত্র নই তবু ফিরে ফিরে আসি আমি
দ্বিতীয় ঈশ্বর সেজে, বিভ্ৰমবিলাসী অন্ধকীট
যে বিশ্বাসে ধরতে চায় সূর্যের কিরীট, তীক্ষ্ণ আলো
আমি সেই বিশ্বাসের সূচীমুখ, নিষ্ঠুর ধারালো স্বাদ নিতে
মৃত্যু নিয়ে খেলা করি এই পৃথিবীতে বহুবার।

প্রতি নেত্রপাত যেন নতুন জন্মের কথা বলে
ধমনীতে রক্তস্রোত উন্মত্ত কল্লোলে বলে যায়
ফিরে আসবো হে মরুৎ ভুলো না আমায়, হে শূন্যতা
হে যৌবন, হে রমণী,অবচিীন কথা বলে যাবে
প্রগল্‌ভ কালের মূর্তি, ক্রমাগত গোপনে পালাবে চুরি
করে জীবনের সীমাচিহ্ন, জাল কণ্ঠস্বরে প্রিয় নামে
ডাক দেবে, তুচ্ছ করো : যেন নীল খামে মিথ্যে চিঠি
নামহীন কেউ লেখে, ভুল ট্রেন সিটি দিয়ে যায়…

আমার অনেক জন্ম, আসলে তো কোনোদিনই মৃত্যুকে দেখিনি
অসংখ্য ছবির মালা যে মায়াবিনী দুরাশায়
ফোটায় স্মৃতির ফুল। ক্রমে বেড়ে যায় রক্তঋণ
পুরুষের চক্ষে জ্বলে ধারালো সঙ্গিন, রমণীর
বক্ষযুগে স্তন্য ক্ষরে, আমার শরীর টুকরো হয়
রক্তস্রোত এক থাকে, দুহাতে সময় নিঃস্ব করি।

দুহাতে, শরীরে আমি এই পৃথিবীর সব চাই
অথচ হৃদয় ছিল মুমুক্ষুর
অথচ জয়ের মধ্যে মিশে আছে শোক।

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 134

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts