Poem

কারাগারের ভিতরে পড়েছিল জ্যোৎস্না
বাইরে হাওয়া, বিষম হাওয়া, সেই হাওয়ায়
নশ্বরতার গন্ধ
তবু ফাঁসির আগে দীনেশ গুপ্ত চিঠি লিখেছিল
তার বউদিকে :
“আমি অমর, আমাকে মারিবার সাধ্য কাহারো নাই।”

মধ্যরাত্রি, আর বেশী দেরী নেই
প্ৰহরের ঘণ্টা বাজে, সান্ত্রীও ক্লান্ত হয়
শিয়রের কাছে এসে মৃত্যুও বিমর্ষ বোধ করে
কণ্ডেম্‌ন্‌ড সেলে বসে প্রদ্যোৎ ভট্টাচাৰ্য লিখছে :
“মা, তোমার প্রদ্যোৎ কি কখনো মরতে পারে?
আজ চারদিকে চেয়ে দ্যাখো
লক্ষ ‘প্রদ্যোৎ’ তোমারদিকে চেয়ে হাসছে—
আমি বেঁচেই রইলাম মা, অক্ষয়–”

কেউ জানতো না সে কোথায়
বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ছেলেটি, আর ফেরেনি
জানা গেল, দেশকে ভালোবাসার জন্য সে পেয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড
শেষ মুহূর্তের আগে পোস্টকার্ডে ভবানী ভটচায
অতি দ্রুত লিখেছিল ছোট ভাইকে :
“অমাবস্যার শ্মশানে ভীরু ভয় পায়–
সাধক সেখানে সিদ্ধিলাভ করে
আজ আমি বেশী কথা লিখবো না
শুধু ভাববো, মৃত্যু কত সুন্দর।”
লোহার শিকের ওপর হাত
তিনি তাকিয়ে আছেন অন্ধকারের দিকে
দৃষ্টি ভেদ করে যায় দেয়াল, অন্ধকারও
বাগ্ময় হয়
সূর্য সেন পাঠালেন তাঁর শেষ বাণী :
“আমি তোমাদের জন্য কী রেখে গেলাম?
শুধু একটি মাত্র জিনিস,
আমার স্বপ্ন—
একটি সোনালি স্বপ্ন
এক শুভ মুহূর্তে আমি প্রথম এই স্বপ্ন দেখেছিলাম!”

সেই সব স্বপ্ন এখনও বাতাসে উড়ে বেড়ায়,
শোনা যায় নিশ্বাসের শব্দ
আর সব মরে, স্বপ্ন মরে না—
অমরত্বের অন্য নাম হয়
কানু, সন্তোষ, অসীমরা জেলখানার নির্মম অন্ধকারে বসে
এখনও সেরকম স্বপ্ন দেখছে।

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 918

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts