Poem

থেমে থাকা যাত্রী

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

শালুক-বিল ইস্টিশানে থেমে রইলো রাতের রেলগাড়ি
আমরা যারা হিল্লি-দিল্লি দিচ্ছিলাম পাড়ি
একটি নয়, দুটিও নয়, সাত ঘণ্টা দেরির
অস্থিরতায় জ্বলে উঠলো শরীর
ছেঁড়া কাঁথার মতন কিছু অন্ধকার, ভূতের মতন কয়েকখানা তাল
গাছ ছাড়া আর কিছুই নেই, দিকশূন্য দূরের চক্রবাল
মেঘ খেয়েছে চাঁদ, আকাশ জুড়ে শুধুই ছাই
সব কিছুই অনড়, তবু বাতাসে যাই যাই।

কামরা থেকে নেমে একটু জুড়োই মনস্তাপ
গর্ত ভরা বর্ষা, পাশে ফুঁসে উঠলো সাপ
যাঃ যাঃ বলে সরে গেলাম, ঝোপের ধারে খানা-
খন্দ এবং গত রাতের মৃতপশুর গন্ধ, আর হয়তো রাতকানা
পাগল একটা রয়েছে উবু হয়ে
নষ্ট-ঘুমে এই সমস্ত সয়ে
হঠাৎ ভাবি, যদি আমি হতাম কোনো সশস্ত্র বিপ্লবী
ভিয়েতনাম বা বোলিভিয়ার, নয় সামান্য কবি
হাতে একটা মেশিন গান, মাথার মধ্যে পবিত্র এক ক্রোধ
ট্রেন ডাকাতি-ফাকাতি নয়, বরং যারা এমন গতিরোধ
করেও যে-যার ঘরে ঘুমোয়, তাদের গৃহস্থালি
লণ্ডভণ্ড করে দিতাম গুলির ঝাঁকে, শুধুই জোড়াতালি
দিয়ে যারা দেশ চালাচ্ছে তাদের মুখে দিতাম দুই লাথি।
এবং আমার সঙ্গী হতে সুনিশ্চিত পেতাম অনেক টনকো-যুবা সাথী।

রাত্রি জাগা বিরক্তিতেই মাথায় ঘোর চিন্তা এই সমস্ত
আসল যারা বিপ্লবী, সব ঘর গুছোত ব্যস্ত
যে-যার পাতে ঝোল টানছে, শুরুৎ শুরুৎ শব্দে কান ফাটে
যারা স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তাদের কেউ নেই কোনো তল্লাটে
আমি নিছক শব্দ ছানি, কলম দিয়ে ছেটাই শুধু কালি
নিজের মুখেও লেগেছে তা, তবুও দিই নিজেকে হাততালি
যাকগে ওসব, যা চলছে তাই চলুক আমার কিসের মাথাব্যথা
মাথাটাকে ফাঁকা করাই এখন আসল কথা
বরং অন্ধকারের ঐ বিড়ি ধরানো পাগলটার পাশে
খানিক গিয়ে বসাই ভালো, পাগলরাই আসল সৎ, অবিচলিত
সকল সর্বনাশে!

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 128

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts