Poem

প্রণামের ছলে খুব কাছে এগিয়ে গিয়েছিল আততায়ী
প্রণামের কী যে অভারতীয় অপব্যবহার!
তারপর তিনটি বুলেট, ধ্বনি নয়, বিমূঢ় প্রতিধ্বনি
নগ্ন বক্ষ ফুঁড়ে বেরুচ্ছে রক্তের ধারা, তিনি তবু এগিয়ে গেলেন কয়েক পা
প্রার্থনা মঞ্চের দিকে, হাত জোড় করা, প্রার্থনা আর হলো না
তিনি শুধু শেষ উচ্চারণ করলেন, হে রাম
রামরাজত্বের রাম, দরিদ্রের কাল্পনিক মুক্তিদাতা, না নাথুরাম?
ছন্নছাড়া, অতিকাতর, উদভ্রান্ত, তবু স্বাধীনতার বিবেক,
তিনি লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে।

সবাই বলে, গান্ধীজী মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের জন্য
প্রাণ দিয়েছিলেন
কজন মুসলমানের বাড়িতে গান্ধীজীর ছবি টাঙানো থাকে?
পাকিস্তান বাংলাদেশে কেউ গান্ধীজীর নাম সচরাচর
উচ্চারণও করে না
কেউ মনে রাখেনি, দেশ বিভাগের জন্য যিনি মাতৃহীন শিশুর মতন
অশু বর্ষণ করেছিলেন
হিংসার দৈত্যের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন ক্ষুদ্র শরীরে অসীম সাহসী
অহিংসার তেজ নিয়ে
কেউ মনে রাখেনি, মনে রাখলেই জাগবে পাপবোধ
তিন খণ্ড হতে চায় আরও অনেক খণ্ড, কাঁটাতারের বেড়াজালে
তিনি কোথাও নেই
ছুরিতে ভাগ করা তাঁর স্বদেশে আজ ঝলসাচ্ছে
আরও অসংখ্য ছুরি
সবরমতী আশ্রমের সামনেই গড়াচ্ছে রক্তস্রোত…

তিনটি গুলির প্রতিধ্বনি আজও বুকের মধ্যে তোলে
তিনটি প্রশ্ন
পাবে? পাবে? পাবে?
সনাতন ধর্মকে বসাও সিংহাসনে, সমস্ত মানুষ মুক্তি পাবে?
পুর্বে ও পশ্চিমে ধর্মের ধ্বজা নিয়ে গড়া হলো যে-যে রাষ্ট্র
সেখানে ইসলামের সমভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়েছে?
কেউ অমিত ভোগের লাস্যে হা-হা করে হাসে
কেউ ক্ষুধায় ভূমিতে জিভ ঘষে
ধর্ম ব্যবসায়ীরা কেউ ধর্ম মানে না
বাবরি মসজিদে ধর্ম নেই, রাম মন্দিরে ধর্ম নেই
হিন্দু মুসলমানকে মারবে, মুসলমান হিন্দুকে মারবে
পেছনে মুণ্ডওয়ালা একদল অদ্ভুত প্রাণী খুন করবে
আর একদল পেছনে মুণ্ডওয়ালাদের
মন্দির ভাঙবে, মসজিদ ভাঙবে, আবার মন্দির ভাঙবে, আবার মসজিদ ভাঙবে
এর বস্তিতে আগুন, ওর বস্তিতে আগুন
আবার মারো, এ ওকে মারো, সে তাকে মারুক
শিশুকে কেড়ে নিক, জননীকে পোড়াক
আবার ধ্বংস, আবার আগুন, আবার মারো,
মারো, মারো, মারো
শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছোবে?

Author Bio

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ - ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে

More

This post views is 392

Post Topics

Total Posts

1193 Published Posts