Poem

এগারোই সেপ্টেম্বর

তসলিমা নাসরিন

উঁচু দুটো বাড়ির পতন মানে উঁচু কিছুর পতন
অহঙ্কারের পতন
মহাশক্তির পরাশক্তির অহঙ্কারের পতন
তিমির গায়ে খলসে মাছের কামড় লাগলে তিমির বুঝি মান যায় না!
সাকুল্যে তিন হাজার মানুষের কথা বলছো!
মৃত্যুর কথা বলছো।
হাউ মাউ করে কাঁদছো যে!
মানুষের জন্য কাঁদছো?
এ তো দেখছি সত্যিই মাছের মায়ের কান্না গো! এত শোক কেন!
এত কেন হাহাকার!
সাগর বানিয়ে দিচ্ছ চোখের জল ফেলতে ফেলতে, মাসের পর মাস ফেলেই যাচ্ছে!,
বছর ধরে ফেলছো।
ক ফোঁটা চোখের জল ফেলেছো যখন এক ইরাকেই তোমাদের ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়ামের
কারণে ঘরে ঘরে ক্যান্সার হচ্ছে, পঙ্গু শিশু জন্ম নিচ্ছে! আর দশ লক্ষ মানুষ মরে গেল
কেবল আন্তর্জাতিক এমবারগোতে?
ওরা বুঝি মানুষ নয়?
ক ফোঁটা চোখের জল ফেলেছো রুয়াণ্ডার গৃহযুদ্ধে লক্ষ লোকের মৃত্যুতে,
একটুও তো কাঁদোনি? সৌধ বানাতে চাওনি তো!
রুয়াণ্ডার মানুষ বুঝি মানুষ নয়?
কেবল তোমাদের উঁচু বাড়িতেই ছিল মানুষ!
আসলে ওরাও তো আর আলাদা করে খুব বেশি মানুষ ছিল না, বেশির ভাগই ছিল
দরিদ্র, ইললিগ্যাল ইমিগ্রেন্ট, এশিয়ার, লাতিন আমেরিকার।
(তবে কি মানুষের জন্য নয়, উঁচু বাড়িটার জন্যই কেঁদেছো! মানুষগুলোর কোনও
নিরহঙ্কারী ছোট বাড়ি ধ্বসে মৃত্যু হলে এত তো কাঁদতে না।)
কফোঁটা চোখের জল ফেলেছো বসনিয়ার মৃতদের জন্য?
অনাহারে মরে যাওয়া সোমালিয়ার তিনলক্ষ মানুষের জন্য?
ক ফোঁটা চোখের জল ফেলেছো যখন তৃতীয় বিশ্বের মানুষ কেবল না খেতে পেয়ে, কেবল
না চিকিৎসা পেয়ে, কেবল খাবার জলের অভাবেই মরে যাচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিদিন সহস্র!
খবর রাখো? চোখে পড়ে ওসব?

কেবল উঁচু বাড়ি ভাঙলেই বুঝি চোখে পড়ে, উচু বাড়ির মৃত্যুই চোখে পড়ে,
ছোট বাড়ির, বস্তির, রাস্তার ঘরহীন মানুষ মরলে চোখে পড়ে না!
মৃত্যুটাও, মানুষের মৃত্যুটাও বীভৎসরকম রাজনীতির পাকে পড়ে গেল।
নিরীহ জীবন তো নয়ই, মৃত্যুর মত করুণ কাতর কষ্টকর জিনিসও
শেষপর্যন্ত এই পাক থেকে সামান্যও মুক্তি পেল না।

Author Bio

তসলিমা নাসরিন (জন্ম: ২৫ আগস্ট ১৯৬২) বাংলাদেশের একজন সাহিত্যিক ও চিকিৎসক। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে একজন উদীয়মান কবি হিসেবে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করে তসলিমা এই শতকের শেষের দিকে নারীবাদী ও ধর্মীয়

More

This post views is 135

Post Topics

Total Posts

176 Published Posts